নিরাময়ের ক্ষেত্রে বিশ্বাসের ভূমিকা

বিংশ শতাব্দিতে ওষুধ সার্জারি বা প্রযুক্তি নির্ভর চিকিৎসাব্যবস্থা হয়ে পড়েছিলো অতিমাত্রায় যান্ত্রিক। ফলে নিরাময়ের ক্ষেত্রে বিশ্বাস বা আধ্যাত্মিকতার কোনো প্রভাব নেই- এতদিন এটাই ছিলো অধিকাংশের ধারণা। কিন্তু এ ধারণায় প্রথম ফাটল ধরান হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষক ডা. হার্বার্ট বেনসন।

১৯৭৫ সালে প্রকাশিত তার বেস্ট সেলার ‘রিলাক্সেশন রেসপন্স’ গ্রন্থে তিনি দেখান মেডিটেশন বা প্রার্থনা

করে কীভাবে অনিদ্রা, সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা এবং ব্যথা-বেদনায় আক্রান্ত রোগীরা আরোগ্য লাভ করেছেন। তিনি বলেন, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণে যে রোগ-বালাই হয় প্রচলিত চিকিৎসায় তাতে খুব একটা কাজ হয় না। বরং এক্ষেত্রে ৬০-৯০% নিরাময় হয় রোগীর বিশ্বাসের কারণে।

বেনসনের পর এ নিয়ে গবেষণা করেছেন ড. হ্যারল্ড কোনিগ, ড. ডেভিড লারসন, ড. জেফ্রি লেভিন প্রমুখ। এ ধারণাকে জনপ্রিয় করেছেন ড. দীপক চোপড়া, ড. এন্ড্রু ওয়েল, ড. বার্নি সীজেল ও ড. ল্যারী ডসি প্রমুখ চিকিৎসাবিদরা।

নিরাময়ে মেডিটেশন এবং প্রার্থনার ভূমিকা ব্যাখ্যায় গবেষক ডা. হার্বার্ট বেনসন বলেন, এক অসীম ও পরম সত্তায় বিশ্বাস স্থাপনের আকুতি মানুষ তার জেনেটিক ব্লুপ্রিন্টেই বহন করছে। আর এ বিশ্বাস নিরাময়ের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। এমনকি ওষুধ বা সার্জারিও যে কার্যকর হয়, তার মূল কারণ রোগীর বিশ্বাস- চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে প্লাসিবো ইফেক্ট বলা হয়। ফলে প্রার্থনার মাধ্যমে রোগীর মধ্যে যখন বিশ্বাস সঞ্চারিত হয়, তখন তার দেহের নিউরো-অ্যানাটমিক্যাল সিস্টেম প্রভাবিত হয়ে শুরু হয় রোগমুক্তির প্রক্রিয়া। এক অদম্য ইতিবাচক শক্তি তখন রোগ বা সমস্যার নেতিবাচক মূল কারণকে দূরীভূত করে সুস্থ করে তোলে, সমাধানের পথ দেখায়।

No comments:

Post a Comment