স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম:-(৬)আপনিও অংশ নিন

  • রক্ত দিন
  • ক্যাম্প করুন
  • স্বেচ্ছাসেবা
  • ক্যারিয়ার

আপনিও অংশ নিতে পারেন এ মহতী উদ্যোগে।

রক্ত দিন

স্বেচ্ছা রক্তদাতারাই নিরাপদ ও সুস্থ রক্তদান আন্দোলনের প্রাণ। কোয়ান্টাম ১৯৯৬ সাল থেকে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়ের নিরন্তর প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছে ২০,০০০ আজীবন এবং প্রায় দেড় লক্ষ অনিয়মিত রক্তদাতার সুসংগঠিত ব্লাড ডোনার পুল। কোয়ান্টামের রক্তদাতারা এখন শুধু দেশেই রক্ত দিচ্ছেন না, বিদেশেও রক্তদানকে জনপ্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। ২০১২ সালে নতুন ২৫,৯০৬ জন রক্তদাতা অর্ন্তভুক্ত হয়েছেন কোয়ান্টাম রক্তদাতা পরিবারে। আজীবন রক্তদাতা হয়েছেন মোট ৩,৪৬২ জন। স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের উদ্বুদ্ধ করার জন্যে কোয়ান্টাম গ্রহণ করেছে নানা ধরনের কর্মসূচি। আপনিও অংশগ্রহণ করুন।

ক্যাম্প আয়োজন করুন

আপনি যদি কোনো স্বেচ্ছা সামাজিক বা পেশাজীবী বা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত থাকেন তাহলে ক্যাম্প বা অজেয় ১৯ বা রক্তদানে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজনে উদ্যোগ নিন।

স্বেচ্ছাসেবায় অংশ নিন

স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ক্যাম্পে বা ল্যাবে অংশ নিন। মহৎ সেবার এক অনাবিল তৃপ্তি ও আনন্দ পাবেন আপনি।

ক্যারিয়ার গড়ুন

আপনি যদি কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে সে সুযোগও থাকছে। আপনার বায়োডাটা লিখে আজই পাঠিয়ে দিন ফাউন্ডেশনের ঠিকানায় বা ই-মেইল করুন।

স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম:-(৫) রক্ত দিতে চাইলে

  • রক্তদান : কেন
  • রক্তদাতা : কে
  • রক্তদান : কীভাবে

রক্তদানে আপনার শরীরের কোনো ক্ষতি হবে না। ছেলেদের শরীরে ওজনের কেজিপ্রতি ৭৬ মিলিলিটার এবং মেয়েদের শরীরে ওজনের কেজিপ্রতি ৬৬ মিলিলিটার রক্ত থাকে। সবারই কেজিপ্রতি ৫০ মিলিলিটার রক্ত সংবহনের কাজে লাগে, বাকিটা উদ্বৃত্ত। ছেলেদের ওজনের কেজিপ্রতি ২৬ মিলিলিটার ও মেয়েদের ওজনের কেজিপ্রতি ১৬ মিলিলিটার রক্ত উদ্বৃত্ত। ফলে ৫০ কেজি ওজনের একটি ছেলের শরীরে উদ্বৃত্ত রক্তের পরিমাণ 50x26=1300 মিলি এবং একই ওজনের একটি মেয়ের শরীরে উদ্বৃত্ত রক্তের পরিমাণ 50x16=800 মিলি। স্বেচ্ছা রক্তদানে একজন দাতার কাছ থেকে ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার রক্ত সংগ্রহ করা হয় যা তার শরীরের উদ্বৃত্ত রক্তের অর্ধেকেরও কম। ফলে রক্তদানে শারীরিক ক্ষতি হওয়ার কোনো আশংকাই নেই।

ধর্মীয় দিক থেকে অত্যন্ত পুণ্যের

রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকে অত্যন্ত পুণ্য বা সওয়াবের কাজ। একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানবজাতির জীবন রক্ষা করার মতো মহান কাজ (সূরা মায়েদা : ৩২)।

স্বাস্থ্যের জন্যে উপকারি

নানান গবেষণার ফলে এটা এখন প্রমাণিত যে, রক্ত দেয়া স্বাস্থের জন্যে উপকারি শুধু নয়, রক্ত দিলে একজন মানুষ মুক্ত থাকতে পারেন বেশ কয়েকটি মারাত্মক রোগের ঝুঁকি থেকে:

  • হৃদরোগ ও হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমে : সিএনএন পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, রক্তে যদি লৌহের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে কোলেস্টেরলের অক্সিডেশনের পরিমাণ বেড়ে যায়, ধমনী ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ফলাফল হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি। নিয়মিত রক্ত দিলে দেহে এই লৌহের পরিমাণ কমে যা হৃদরোগের ঝুঁকিকেও কমিয়ে দেয় কার্যকরীভাবে।
  • ফ্লোরিডা ব্লাড সার্ভিসের এক জরিপে দেখা গেছে, যারা নিয়মিত রক্ত দেন, তাদের হার্ট এটাকের ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ৮৮ ভাগ কম এবং স্ট্রোকসহ অন্যান্য মারাত্মক হৃদরোগের ঝুঁকি ৩৩ ভাগ কম।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে : মিলার-কিস্টোন ব্লাড সেন্টারের এক গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত রক্ত দিলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। বিশেষ করে ফুসফুস, লিভার, কোলন, পাকস্থলী ও গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়মিত রক্তদাতাদের ক্ষেত্রে অনেক কম বলে দেখা গেছে।
  • প্রাণবন্ততা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি : রক্তদান করার সাথে সাথে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত বোন ম্যারো নতুন কণিকা তৈরির জন্যে উদ্দীপ্ত হয়। দান করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়, আর লোহিত কণিকার ঘাটতি পূরণ হতে সময় লাগে ৪ থেকে ৮ সপ্তাহ। আর এই পুরো প্রক্রিয়া আসলে শরীরের সার্বিক সুস্থতা, প্রাণবন্ততা আর কর্মক্ষমতাকেই বাড়িয়ে দেয়।
  • নিজের সুস্থতা যাচাই : রক্ত দিতে এসে একজন রক্তদাতা তার সার্বিক সুস্থতাকে যাচাই করে নিতে পারেন। ফলে প্রতি ৪ মাসে ১ বার করে বছরে ৩ বার হয়ে যাচ্ছে তার ব্লাড প্রেশার, পালস লেভেল থেকে শুরু করে ৫টি রক্তরোগের স্ক্রিনিং যা তাকে আশ্বস্ত করে তার সুস্থতা সম্পর্কে।

রক্তদাতা : কে ?

আপনার বয়স যদি ১৮-৬০ বছরের মধ্যে হয়, ওজন যদি হয় কমপক্ষে ৪৮ কেজি এবং আপনি যদি সুস্থ থাকেন, তাহলেই আপনি প্রতি ৪ মাস পর পর রক্ত দিতে পারেন। নিচের ডোনার হেলথ চেক থেকে এক্ষুণি জেনে নিতে পারেন আপনি রক্তদানে সক্ষম কি না-

রক্তদান : কীভাবে

আপনি কোয়ান্টাম ল্যাবে এসে রক্ত দিতে পারেন। অথবা ক্যাম্পেও আপনি রক্ত দিতে পারেন।

স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম:-(৪)রক্ত পেতে হলে

  • রক্তের প্রয়োজনে আপনার করণীয়
  • কোন ধরণের রক্ত ও রক্ত উপাদান আপনার প্রয়োজন
  • সামর্থ্যহীনের সেবায় ফাউন্ডেশন

রক্তের প্রয়োজনে আপনার করণীয়

  • সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল/ ক্লিনিকের প্যাডে অথবা নির্ধারিত ফর্মে মেডিকেল অফিসারের সিল ও স্বাক্ষরযুক্ত লিখিত ব্লাড রিকুইজিশন আনতে হবে। রিকুইজিশন ফর্মে রোগীর অবস্থানসহ তার রক্তের গ্রুপ ও রেসাস ফ্যাক্টর স্পষ্টভাবে লেখা থাকতে হবে।
  • ক্রসম্যাচিং-এর জন্যে সংশ্লিষ্ট রোগীর ৫ মি.লি. পরিমাণ রক্ত (ফ্রেশ স্যাম্পল) সাথে আনতে হবে।
  • রক্ত বা রক্ত উপাদানের জন্যে নির্ধারিত প্রসেসিং খরচ প্রদান ও ক্রস-ম্যাচিং-এর জন্যে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

কোন ধরণের রক্ত ও রক্ত উপাদান আপনার প্রয়োজন

সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কোয়ান্টাম ল্যাব, রক্ত সংগ্রহ করার পর উন্নতমানের মেশিনের সাহায্যে রক্তের কনিকাগুলো আলাদা করে ফেলা হয়। ফলে রোগীর যে কনিকা প্রয়োজন সেটাই তাকে দেয়া হয়।
  1. প্লাটিলেট কনসেনট্রেট
  2. ফ্রেশ প্লাজমা
  3. ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা
  4. প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা
  5. প্লাটিলেট পুওর প্লাজমা
  6. প্রোটিন সলিউশন
  7. আরসিসি
  8. ক্রায়ো-প্রিসিপিটেট
অর্থাৎ রক্তের ৮টি উপাদান সরবরাহ করছে। ফলে ডেঙ্গু, আইটিপি, থ্যালাসেমিয়া, ব্লাড ক্যান্সার, হিমোফিলিয়া, লিউকেমিয়া, আগুনে পোড়া, সিভিয়ার এনিমিয়াসহ যেকোনো রোগীর প্রয়োজনীয় রক্ত ও রক্ত উপাদানের জন্যে নিঃসঙ্কোচে যোগাযোগ করুন :

স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম কোয়ান্টাম ল্যাব

৩১/ভি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সড়ক,
শান্তিনগর, ঢাকা-১২১৭ (ইস্টার্ন প্লাস মার্কেটের পূর্ব পাশে)
ফোন : ৯৩৫১৯৬৯, ৮৩২২৯৮৭, ০১৭১৪-০১০৮৬৯
E-Mail : blood@quantummethod.org.bd
Web Site : www.quantummethod.org.bd

সামর্থ্যহীনের সেবায় ফাউন্ডেশন

কোয়ান্টাম ল্যাবে সামর্থ্যহীন রোগীদের সেবায় রয়েছে অনুদান হিসেবে ও নামমাত্র প্রসেসিং খরচে রক্ত দেয়ার সুযোগ। এ ব্যাপারে যেকোনো সহযোগিতার জন্যে ল্যাবে কর্তব্যরত অর্গানাইজারের সাথে যোগাযোগের জন্যে অনুরোধ করা যাচ্ছে।

রক্ত সবসময় সবার জন্যেই ফ্রি। রক্তদাতা শুধু নয়, রক্তগ্রহীতার জন্যেও। আমরা যে দামটা রাখছি তার মধ্যে বেশ কতগুলো খরচ অন্তর্ভুক্ত আছে যা কাউকে না কাউকে করতে হবে। যেমন, প্রসেসিং খরচ। দুই নম্বর হলো ব্যাগের খরচ। তিন নম্বর হলো স্ত্রিনিং খরচ। কারণ আমাদের ল্যাবে আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত রক্তের ৫ টি টেস্ট করি - ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস বি/সি, সিফিলিস, গনোরিয়া এবং এইডস। অন্য যেকোনো জায়গায় এই টেস্টগুলো আলাদাভাবে করাতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাগবে। আর বহুজাতিক হাসপাতালগুলোতে এরকম এক ব্যাগ রক্তের দাম পড়ে ৩ হাজার টাকারও বেশি।

এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে আমরা এটি ৮০০ টাকায় দিতে পারছি কীভাবে? এর জবাব হলো আমাদের কর্মীবাহিনীর আন্তরিকতা, আমাদের স্বেচ্ছাসেবীদের শ্রম এবং সর্বোপরি পরম করুণাময়ের রহমত। আমরা যেহেতু অপচয় করি না এবং আন্তরিক সেবা দেয়ার চেষ্টা আমরা করি এবং একটা দীর্ঘসময় পর্যন্ত সেজন্যে। আর একেবারেই যাদের আর্থিক সঙ্গতি নেই, তাদের জন্যে ল্যাবে রয়েছে বিশেষ ছাড় যে ছাড়কৃত প্রসেসিং মূল্যে বা বিনা প্রসেসিং খরচে তারা রক্ত নিতে পারেন।

স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম:-(৩) কোয়ান্টাম ল্যাব

  • নিরাপদ রক্তের নিশ্চয়তা
  • রক্তদাতাদের সেবায়
  • ল্যাব কমিউনেকশন

আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে চার লক্ষ ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় রক্তের একটি বড় অংশই আসে পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের কাছ থেকে। আর পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের অধিকাংশই সিফিলিস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি বা এইডসে আক্রান্ত। ফলে এই দূষিত রক্ত পরিসঞ্চালিত হয়ে রক্তগ্রহীতাও প্রায়শই আক্রান্ত হন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। দূষিত রক্তের অভিশাপ থেকে মুমূর্ষু মানুষকে রক্ষা করার জন্যে নিরাপদ ও সুস্থ রক্তের প্রয়োজনীয়তা এখন সচেতন মানুষ বুঝতে পেরেছেন। তাই তারা এগিয়ে এসেছেন স্বেচ্ছা রক্তদানে। এ কার্যক্রমে যত বেশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এগিয়ে আসবে তত দ্রুত আমরা দূষিত রক্তের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবো। দেশের প্রবীণ রক্ত পরিসঞ্চালনবিদ প্রফেসর ডা. মুজিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে ১৯৭২ সালের ১০ জুন জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম নিজ রক্তদানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের সূচনা করেন। ১৯৭৮ সালে সন্ধানী এবং ১৯৮১ সালে রেড ক্রিসেন্ট এ কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে সাংগঠনিকভাবে বাংলাদেশে স্বেচ্ছা রক্তদান আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে এগিয়ে এসেছে অরকা (১৯৮২), বাঁধন (১৯৯৭) বা লায়ন্স বাংলাদেশের মতো রক্ত সংশ্লিষ্ট সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। এই পথ ধরেই ১৯৯৬ সালে কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম শুরু হয়।

১৯৯৬ সালে কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নিজস্ব ল্যাব। ২০০৩ সালে সংযোজিত হয় রক্তের কম্পোনেন্ট সেপারেটর (সেন্ট্রিফিউজ মেশিন), স্ক্রিনিংয়ের জন্যে আধুনিক এলাইজা মেশিন, -৯০ ও -৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ডিপফ্রিজ এবং প্লাটিলেট সংরক্ষণের জন্যে প্লাটিলেট ইনকিউবেটর। ২০০০ সালে ল্যাবের কার্যক্রম শুরু করার পর যেখানে প্রথম বছরে রক্ত সরবরাহ করা হয়েছিলো ১,৫৬৪ ইউনিট সেখানে ২০১২ সালে ল্যাব থেকে প্রতিমাসে গড় সরবরাহকৃত রক্ত ও রক্ত উপাদান ৬৫০০ ইউনিটেরও বেশি।

কোয়ান্টাম ল্যাব প্রতিষ্ঠার প্রথম দিন থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত পাঁচটি মৌলিক স্ক্রিনিং সম্পন্ন করে রক্ত প্রদানের ব্যাপারে আপসহীন মনোভাব নিয়ে কাজ করে আসছে। রক্তে হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, সিফিলিস, এইডস বা ম্যালেরিয়া ইত্যাদি যেকোনো একটি জীবাণুর উপস্থিতি সম্পর্কে কোনোরকম সংশয় বা প্রশ্ন দেখা দিলে সে রক্তের ব্যাগ সাথে সাথে বাতিল ও ধ্বংস করা হয়।

নিরাপদ রক্তের নিশ্চয়তা

  • প্রতি ইউনিট রক্ত ও এর উপাদান স্বেচ্ছা দান।
  • FDA অনুমোদিত উন্নতমানের (CPDA-1) ব্যাগে সযত্নে সংগৃহীত ও নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষিত।
  • নিখুঁত ক্রস-ম্যাচিং অর্থাৎ থ্রি-ফেজ কম্প্যাটিবিলিটি (কক্ষ তাপমাত্রায়, ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এবং ইনডাইরেক্ট কুম্বস টেস্ট) টেস্ট করা হয়।
  • নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশেষজ্ঞদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক ল্যাব-এ রয়েছে সেল সেপারেটর সেন্ট্রিফিউজ মেশিন, -৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ডিপ ফ্রিজ, প্লাটিলেট ইনকিউবেটর এবং এলাইজা মেশিনসহ প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি।
  • বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নির্ধারিত মৌলিক ৫টি স্ক্রিনিং (হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এইডস এবং ম্যালেরিয়া) বাধ্যতামূলকভাবে সম্পন্ন করা হয়। ফলে ল্যাব থেকে সরবরাহকৃত রক্তের ব্যাপারে সারা দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এখন পুরোপুরি আস্থাশীল।

রক্তদাতাদের সেবায়

  • প্রতিবার রক্তদানের পর রক্তদাতা উপহার হিসেবে পাচ্ছেন রক্তবাহিত ৫টি রোগের (হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এইডস এবং ম্যালেরিয়া) স্ক্রিনিং রিপোর্ট।
  • রক্তদাতা রক্তদানের পরই পাবেন ডোনার কার্ড।
  • রক্তদাতা নিজ দেহের প্রয়োজনে জমাকৃত প্রতি ব্যাগ রক্ত ফেরত পাবেন কোনো প্রসেসিং খরচ ছাড়া। অতিরিক্ত (সঞ্চিত রক্তের সমপরিমাণ) প্রতি ইউনিটে প্রসেসিং খরচ মাত্র ৫০%।
  • রক্তদাতা তার মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী বা সন্তানের জন্যে প্রসেসিং খরচে (সঞ্চিত রক্তের সমপরিমাণ) ছাড় পাবেন ২০%।
  • তিনবার রক্তদান করার পর আজীবন রক্তদানের প্রতিশ্রুতি দিলে রক্তদাতা পাবেন সিরামিকসে মুদ্রিত সুদৃশ্য সম্মাননা স্মারক এবং বিশেষ আইডি কার্ড ও সনদপত্র।
  • ১০ বার রক্তদান করে লাইফ লং ব্লাড ডোনার সিলভার ক্লাব-এর সদস্য হলে রক্তদাতা পাবেন বিশেষ সম্মাননা মেডেল, আইডি কার্ড ও সনদপত্র।

ল্যাব কমিউনেকশন

কোয়ান্টাম ল্যাবে রয়েছে কমিউনিকেশন অর্গান নামে অত্যন্ত গতিশীল একটি অর্গান যাদের কাজ হলো ১ম বার রক্তদাতাদের ২ য় বার রক্তদাতায় রূপান্তরিত করা। ২য় বার রক্তদাতাদের ৩য় বার রক্তদাতায় রূপান্তরিত করা এবং এইভাবে তাকে একজন নিয়মিত ডোনারে পারিণত করা যার ফলে তিনি একসময় নিজের তাগিদেই ল্যাব এসে রক্ত দিয়ে যাবেন। এই অর্গানে এখন রয়েছে মোট ১৫ জন দক্ষ ফোন কমিউনেকটর যারা ডোনার ডাটাবেজের তথ্য থেকে প্রতি ৪ মাস পর পর ডোনারদের সাথে যোগাযোগ করে থাকেন। তাদের কুশল জিজ্ঞাসা, জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো এবং সময় হলে ল্যাবে এসে রক্ত দেয়ার আহবান জানান। তাছাড়া যারা রক্ত দিয়ে গেছেন তাদের স্ক্রিনিং রিপোর্টও তারা জানিয়ে দেন ফোনে। কারো কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে তাকে ল্যাবে এসে ফ্রি মেডিকেল সার্ভিসের সেবা নিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এ সেবা অবশ্য ডোনারদের মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানদের জন্যেও দেয়া হয়। অর্থাৎ মূল বিষয়টি হচ্ছে ডোনারদের সাথে একটি নিয়মিত যোগাযোগ এবং সম্পর্ক সৃষ্টি করা যা তাকে কোয়ান্টামের সাথে একাত্ম হতে সাহায্য করবে।

ব্লাড ক্যাম্প

কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের রক্তের একটা বড় অংশই আসে ব্লাড ক্যাম্প থেকে। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩০৯টি ক্যাম্প। ল্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১৩ বছরে বাংলা একাডেমী, লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, বিভিন্ন মার্কেট, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় সহযোগিতায় আয়োজিত এসব রক্তদান ক্যাম্পে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রক্ত দিয়েছেন হাজার হাজার রক্তদাতা।

প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বছরের বিশেষ দিনগুলোতে যেমন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ১লা বৈশাখ, নজরুল জয়ন্তী, পবিত্র আশুরা এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ক্যাম্প আয়োজন করা হয়।

গত ১০-১২ জানুয়ারি, ২০১৪ স্বেচ্ছা রক্তদান আন্দোলনের ওপর ভারতের শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠিত হয় ব্লাড কনফারেন্স এন্ড ওয়ার্কশপ। শিলিগুড়িভিত্তিক স্বেচ্ছারক্তদান সংগঠন, শিলিগুড়ি সূর্যনগর সমাজকল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত ৩ দিনব্যাপী এ জাতীয় কনফারেন্সে বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত হন কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের ৪ জন প্রতিনিধি - অর্গানিয়ার রাবিয়া নাজরীন, ইঞ্জিনিয়ার প্রাঞ্জিত লাল শীল, জিয়াউল ইসলাম এবং শামীমা নাসরীন।

ভারতের ১৪ টি প্রদেশ থেকে সমবেত শতাধিক স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মী ও বিশেষজ্ঞ ছাড়াও এ কনফারেন্সে আমন্ত্রিত হন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর ব্লাড ডোনেশন অর্গানাইজেশন (IFBDO) র প্রেসিডেন্ট জিয়ানফ্রান্কো মাসারো।

স্বেচ্ছা রক্তদান আন্দোলনের নানাদিক নিয়ে ৩ দিনব্যাপী এ সম্মেলনে আলোচনা করেন প্রবাদপ্রতিম স্বেচ্ছা রক্তদান আন্দোলন সংগঠক, পশ্চিমবঙ্গ স্বেচ্ছা রক্তদান আন্দোলনের জনক, AVBD, WB এর প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর দেবব্রত রায়। আরো ছিলেন AVBD তামিলনাড়ুর শ্রী আর রাজকুমার, ইন্ডিয়ান রেডক্রস সোসাইটি আহমেদাবাদের উপদেষ্টা শ্রী মহেশ সি ত্রিবেদী এবং ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (NACO) র ডিরেক্টর মিস বিনীতা শ্রীবাস্তব প্রমুখ।

কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের পক্ষ থেকে এ সেমিনারে একটি বিশেষ নিবন্ধ পাঠ করেন অর্গানিয়ার রাবিয়া নাজরীন। দেখানো হয় QVBDP এর ওপর নির্মিত দুটি বিশেষ ভিডিও ডকুমেন্টারি। প্রেজেন্টেশন এবং ভিডিও প্রদর্শনী দুটি ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণকারীদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। অনেকেই বাংলাদেশ এবং কোয়ান্টামের কার্যক্রম সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং বিস্তারিত জানতে চান।

ভবিষ্যতে রক্তদান কার্যক্রম নিয়ে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন তারা।

স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম:-(2) রক্তদানের ইতিহাস

  • কবে থেকে শুরু
  • উপমহাদেশে স্বেচ্ছা রক্তদানের ইতিহাস
  • বাংলাদেশের অবস্থান
  • কোয়ান্টামের পথ চলা

কবে থেকে শুরু

  • ১৬১৬ : ইংরেজ চিকিৎসক ডা. উইলিয়াম হার্ভের গবেষণার মাধ্যমে মানুষ প্রথম জানতে পারে যে মানবদেহের অভ্যন্তরে রক্ত প্রবাহিত হয়।
  • ১৬৫৭ : স্যার ক্রিস্টোফার রেন ডা. উইলিয়াম হার্ভে আবিষ্কৃত যন্ত্র ব্যবহার করে জন্তুর দেহে ইনজেকশনের মাধ্যমে তরল পদার্থ প্রবেশ করান।
  • ১৬৬৬ : ডা. রিচার্ড লোয়ার সফলভাবে প্রথমবারের মতো একটি কুকুরের দেহ থেকে আরেকটি কুকুরের দেহে রক্ত সঞ্চালনের পরীক্ষা চালান। অবশ্য এর পরে পশুর দেহ থেকে মানবদেহে রক্ত পরিসঞ্চালন করতে গিয়ে চিকিৎসকদের হাতে প্রাণ হারান অনেক মানুষ।
  • ১৬৭৮ : রক্ত পরিসঞ্চালনের ব্যাপারে পোপের নিষেধাজ্ঞা।
  • ১৮১৮ : ডা. জেমস ব্লান্ডেল নামে একজন ইংরেজ ধাত্রীবিদ্যাবিশারদ রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্যে একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন যা দিয়ে সফলভাবে একজন সুস্থ মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মৃত্যপথযাত্রী মানুষের দেহে রক্ত পরিসঞ্চালন করে তাকে বাঁচিয়ে তোলা হয়। তিনিই প্রথম বলেন যে, একজন মানুষের শরীরে কেবল আরেকজন মানুষের রক্তই দেয়া যাবে।
  • ১৯০১ : ভিয়েনার ডা. কার্ল ল্যান্ডস্টেনার দেখান, মানুষের রক্তের প্রধানত ৪ টি গ্রুপ রয়েছে, A, B, AB এবং O. প্রথমবারের মতো মানুষ বুঝলো যে, গত ২৭২ বছর ধরে তাদের ভুলটা ঠিক কোথায় হচ্ছিলো।
  • ১৯১৪-১৯১৮ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের এ সময়টায় যুদ্ধাহত হাজার হাজার মানুষকে বাঁচাতে অনেক রক্তের প্রয়োজন হয়েছিলো। আর তখনই মানুষ আবিষ্কার করলো দুটো বিষয়। এক, রক্তদাতার শরীর থেকে বের করে নেবার পর ঐ রক্তকে জমাট বাঁধার হাত থেকে রক্ষা করা যায় যদি তাতে সোডিয়াম সাইট্রেট মেশানো হয়। দুই, অন্য আরও অনেক জিনিসের মতো রক্তকেও ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করা যায়।
  • ১৯১৬ : প্রথমবারের মতো সফলভাবে সংরক্ষিত রক্তকে আরেকজনের দেহে প্রবেশ করানো হয়। এই ধারণা থেকেই ফ্রান্সে বিশ্বের প্রথম ব্লাড ব্যাংকের সূচনা করেন একজন আমেরিকান সেনা কর্মকর্তা ও মেডিকেল গবেষক অসওয়াল্ড হোপ রবার্টসন।
  • ১৯২১ : লন্ডনের কিংস কলেজ হাসপাতালে বৃটিশ রেডক্রসের সদস্যরা সবাই একযোগে রক্ত দেন। সূচিত হয় বিশ্বের প্রথম স্বেচ্ছা রক্তদানের দৃষ্টান্ত।
  • ১৯২৫ : রক্ত পরিসঞ্চালন নিয়ে গবেষণার জন্যে মস্কোতে ড. আলেক্সান্ডার বগদানভের নেতৃত্বে একটি ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • ১৯৩৭ : আমেরিকার শিকাগোর কুক কাউন্টি হাসপাতালে বিশ্বের প্রথম ব্লাড ব্যাংক স্থাপিত হয়।
  • ১৯৩০-৪০ : ড. চার্লস আর ড্র প্রথমবারের মতো রক্ত থেকে প্লাজমা ও লোহিত কণিকাকে আলাদা করেন।
  • ১৯৩৯-৪০ : ডা. কার্ল ল্যান্ডস্টেনার এবং আরো কয়েকজন গবেষকের চেষ্টায় আবিষ্কৃত হয় রক্তের রেসাস ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম। বোঝা গেল, কেন এতদিন একজনের রক্ত আরেকজনকে দিলে শারীরিক প্রতিক্রিয়া হতো।
  • ১৯৫০ : কাচের পাত্রের বদলে প্লাস্টিকের ব্যাগে রক্ত সংগ্রহ শুরু হয় যা রক্ত পরিসঞ্চালন প্রক্রিয়াকে করে আরো নিরাপদ ও বিজ্ঞানসম্মত।

উপমহাদেশে স্বেচ্ছা রক্তদানের ইতিহাস

  • ১৯২৫ : কোনো ধরনের সংরক্ষণের ব্যবস্থা নয় বরং শুধুমাত্র একজন রক্তদাতার দেহ থেকে একটি সিরিঞ্জের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহ করে রক্তগ্রহীতার দেহে পরিসঞ্চালনের ব্যবস্থা নিয়ে ইম্পিরিয়াল সেরোলজিস্টরা কলকাতার ট্রপিকেল মেডিসিন স্কুলে একটি রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র শুরু করে।
  • ১৯৩৯ : ভারতের রেডক্রস সোসাইটি একটি ব্লাড ব্যাংক কমিটি গঠন করে। এই কমিটি যন্ত্রপাতি দিয়ে রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রটিকে সহায়তা করে এবং রক্তদাতাদের সংগঠিত করতে চেষ্টা করে। ফলে ফ্লাস্কে করে রক্ত সংগ্রহ করে তা কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত ফ্রিজে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।
  • ১৯৪২ : সরকারি সিদ্ধান্তে মেজর জেনারেল ডব্লিউ সি প্যাটনের নির্দেশে কলকাতা ব্লাড ব্যাংক নামে সত্যিকার অর্থে ভারতের প্রথম ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতার সেন্ট্রাল এভিনিউতে। রেডক্রসের ব্লাড ব্যাংক কমিটিকে সার্বিক ব্যবস্থ্‌পনার দায়িত্ব দেয়া হয়।
  • ৬ মার্চ ১৯৪২- ১৫ মে ১৯৪৩ : যুদ্ধাহতদের রক্তের চাহিদা মেটানোর জন্যে ব্লাড ব্যাংক টিম ইংরেজরা, ইংরেজদের পরিচালিত ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকদের কাছ থেকে এই সময়ে ৩৯,০৫০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৫,৪৫৮ ব্যাগ রক্ত ব্লাড ব্যাংকে সংগ্রহ হয়।
  • যুদ্ধের পরে ব্লাড ব্যাংকটিকে সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তখন রক্তদাতাদের রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার কোনো কার্যক্রম না থাকায় রক্ত বিক্রেতাদের রক্ত নিয়েই রক্তের প্রয়োজন মেটানো হচ্ছিলো। চল্লিশের দশকে মেট্রোপলিটন শহরে এবং পঞ্চাশের দশকে জেলা শহরগুলোতে ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। সব ব্লাড ব্যাংকগুলোই পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে বলে অনেক বেসরকারি (commercial) ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠাকে উৎসাহিত করা হয়।
  • ১৯৫৪ : ভারতের বিখ্যাত টাটা পরিবারের লীলা মুলগাওকার এর ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে রক্ত পরিসঞ্চালনের প্রয়োজন হয় এবং সে বেঁচে যায়। তখন থেকে লীলা মুলগাওকার ব্যক্তিগত উদ্যোগে রক্ত দান আন্দোলন পরিচালনা করেন ১৯৯২ সালে তার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত।
  • ৪ আগস্ট ১৯৬২ : যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর ড. ত্রিগুণা সেন-এর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকেরা প্রথমবারের মতো মাসব্যাপী ব্লাড ক্যাম্প আয়োজন করে। ঐ ক্যাম্পে ৩০১ জন রক্ত দান করে।
  • ১৯৭৫ : ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন এন্ড ইমিউনোহেমাটোলজি প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগে অক্টোবরের ১ তারিখ প্রথমবারের মতো সমগ্র ভারতে স্বেচ্ছা রক্তদান দিবস পালন করা হয়।
  • ১৯৮৫ : স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে কলকাতায় প্রথমবারের মতো ৩ দিনব্যাপী ন্যাশনাল সেমিনার এন্ড ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। এই সেমিনারে রক্ত পরিসঞ্চালন বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে সরকারি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমকে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে তখন থেকে গিফট অফ ব্লাড নামে একটি মাসিক পত্রিকা নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়।
  • ৪ জানুয়ারি ১৯৯৬ : জনস্বার্থে ভারতের সুপিম কোর্ট ১৯৯৮ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে সকল প্রকার রক্তের কেনাবেচা বন্ধের ঘোষণা দেয় এবং স্বেচ্ছা রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে স্টেট ব্লাড ট্রান্সফিউশন কাউন্সিল গঠনের জন্যে সরকারকে নির্দেশ প্রদান করে।

বাংলাদেশে স্বেচ্ছা রক্তদানের ইতিহাস

  • ১৯৭২ : জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর ডা. নুরুল ইসলাম নিজ রক্তদানের মাধ্যমে বাংলাদেশে স্বেচ্ছা রক্তদানের সূচনা করেন।
  • ১৯৭৮ : ঢাকা মেডিকেল কলেজের কিছু ছাত্রের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় সন্ধানী। শুরু হয় সাংগঠনিকভাবে বাংলাদেশে স্বেচ্ছা রক্তদান আন্দোলন।
  • ১৯৮১ : বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি শুরু করে তার ব্লাড ব্যাংক কার্যক্রম।
  • ১৯৮২ : অরকা, রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ ছাত্রদের এলামনাই এসোসিয়েশনের স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম সূচিত হয়।
  • ১৯৯৬ : মোবাইল ডোনার পুল গঠনের মাধ্যমে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়।
  • ১৯৯৭ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বেচ্ছা রক্তদান সংগঠন বাঁধন।
  • ২০০০ : কোয়ান্টাম ল্যাব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
  • ২০০৩ : কোয়ান্টাম ল্যাবে সংযোজিত হয় রক্তের কম্পোনেন্ট সেপারেটর (সেন্ট্রিফিউজ মেশিন), স্ক্রিনিংয়ের জন্যে আধুনিক এলাইজা মেশিন, -৯০ ও -৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ডিপফ্রিজ এবং প্লাটিলেট সংরক্ষণের জন্যে প্লাটিলেট ইনকিউবেটর। ফলে এক ব্যাগ রক্তকে বিভিন্ন উপাদানে বিভাজিত করে দেয়া হচ্ছে যার যা প্রয়োজন।
  • ২০১০ : সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কোয়ান্টাম ল্যাব সরবরাহ করছে রক্তের ৮টি উপাদান। মাসে গড় সরবরাহ ৬ হাজার ইউনিট।

কোয়ান্টামের পথ চলা

আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে চার লক্ষ ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় রক্তের একটি বড় অংশই আসে পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের কাছ থেকে। আর পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের অধিকাংশই সিফিলিস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি বা এইডসে আক্রান্ত। ফলে এই দূষিত রক্ত পরিসঞ্চালিত হয়ে রক্তগ্রহীতাও প্রায়শই আক্রান্ত হন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। দূষিত রক্তের অভিশাপ থেকে মুমূর্ষু মানুষকে রক্ষা করার জন্যে নিরাপদ ও সুস্থ রক্তের প্রয়োজনীয়তা এখন সচেতন মানুষ বুঝতে পেরেছেন। তাই তারা এগিয়ে এসেছেন স্বেচ্ছা রক্তদানে। এ কার্যক্রমে যত বেশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এগিয়ে আসবে তত দ্রুত আমরা দূষিত রক্তের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবো। দেশের প্রবীণ রক্ত পরিসঞ্চালনবিদ প্রফেসর ডা. মুজিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে ১৯৭২ সালের ১০ জুন জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম নিজ রক্তদানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের সূচনা করেন। ১৯৭৮ সালে সন্ধানী এবং ১৯৮১ সালে রেড ক্রিসেন্ট এ কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে সাংগঠনিকভাবে বাংলাদেশে স্বেচ্ছা রক্তদান আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে এগিয়ে এসেছে অরকা (১৯৮২), বাঁধন (১৯৯৭) বা লায়ন্স বাংলাদেশের মতো রক্ত সংশ্লিষ্ট সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। এই পথ ধরেই ১৯৯৬ সালে কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম শুরু হয়।

১৯৯৬ সালে কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নিজস্ব ল্যাব। ২০০৩ সালে সংযোজিত হয় রক্তের কম্পোনেন্ট সেপারেটর (সেন্ট্রিফিউজ মেশিন), স্ক্রিনিংয়ের জন্যে আধুনিক এলাইজা মেশিন, -৯০ ও -৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ডিপফ্রিজ এবং প্লাটিলেট সংরক্ষণের জন্যে প্লাটিলেট ইনকিউবেটর। ২০০০ সালে ল্যাবের কার্যক্রম শুরু করার পর যেখানে প্রথম বছরে রক্ত সরবরাহ করা হয়েছিলো ১,৫৬৪ ইউনিট সেখানে ২০১২ সালে ল্যাব থেকে প্রতিমাসে গড় সরবরাহকৃত রক্ত ও রক্ত উপাদান ৬৫০০ ইউনিটেরও বেশি।